শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

সুশাসনে নজর শেখ হাসিনার

স্বদেশ ডেস্ক:

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এবার সুশাসনে নজর দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই অংশ হিসেবে সম্প্রতি টেন্ডার, চাঁদাবাজি, মাদক ও ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এ অভিযানে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের তালিকায় রয়েছেন প্রভাবশালী আরো একাধিক নেতা।

প্রাথমিকভাবে নিজ দলের দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হলেও পর্যায়ক্রমে তার পরিধি বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতেও শুদ্ধি অভিযান চালানো হতে পারে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র এমনটি আভাস দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, টানা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করায় ইতোমধ্যে বিশ্বসম্প্রদায়ের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিও অনেকের কাছে ঈর্ষণীয় বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন আন্তর্জাতিক একাধিক পুরস্কার।

তবে টানা ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দলের কিছু নেতাকর্মীর আর্থিক উত্থান ছিল অবাক করা বিষয়। মাদক, জুয়া, ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানা অবৈধ উপায়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন তারা। নিজ নিজ অঙ্গনে তারা আলাদা রাজত্ব কায়েম করেছেন। উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাটের বিষয় এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে।

এসব নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। দেশের আপামর মানুষের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে সরকারের ইমেজ রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দেশে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোর।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে প্রবাসীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং পৃথক সংবাদ সম্মেলনে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযান জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আবার ওয়ান ইলেভেন আসার দরকার হবে না। এ ধরনের পরিস্থিতি যাতে আর না আসে সে জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর এই অভিযান আমার দল থেকে শুরু করেছি। যত বড় প্রভাবশালীই হোক কেউ পার পাবে না।

সরকারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, চলমান অভিযানে প্রাথমিকভাবে সরকারদলীয় কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও পর্যায়ক্রমে তার পরিধি বেড়ে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীতেও যাবে। তার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় মদদ দেয়ার অভিযোগের মুখে গতকাল রাজধানীর আটটি থানার ওসিকে একযোগে বদলি করা হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগে পল্টন থানার ওসিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে এসব অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকা ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কিছু সাংবাদিকের নাম উঠে আসে। সরকারের সর্বোচ্চ নির্দেশনা ছাড়া তাদের গ্রেফতার নিয়ে দোটানায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যস্ত সময় পার করায় এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরেছেন। সে জন্য গত কয়েক দিনের অভিযানে পাওয়া তথ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্ট আকারে পেশ করা হবে। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে অভিযানের গতিবিধি ঠিক করা হবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিনজন নেতা আলাপকালে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার বাবার স্বপ্ন সোনার বাংলা বিনির্মাণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে যথেষ্ট সম্মানও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে জন্য এবার তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। এতে যত বাধাই আসুক মনে হয় তিনি পিছপা হবেন না।’

একজন নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয়। তাই দেশের স্বার্থে, দলের স্বার্থে এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি যে কাউকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের নীতিনির্ধারণী একজন নেতা ও সরকারের মন্ত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সুশাসনের স্বার্থে শুধু ছাত্রলীগ আর যুবলীগই নয়, আগামী দিনে সরকারের কতজন মন্ত্রী এবং এমপিকে জেলে যেতে হয় তা বলা যাচ্ছে না।’

জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সরকার বা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে বিতর্কিত কাজে জড়িত কেউ অতীতেও পার পায়নি ভবিষ্যতেও পাবে না। সরকারের ইমেজ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত কঠোর।’

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিতর্কিতদের সতর্ক করে বলেন, ‘শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। দলের ভাবমর্যাদা রক্ষা করতে সব আগাছা-পরগাছা মুক্ত করা হবে। যত প্রভাবশালীই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877